আশিস গুপ্ত
“এই অভিযান থেকে সেনারা ফিরে আসবে না—এর অর্থ, গাজা দখল শুরু হয়েছে।” ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন ও ভয়াবহ মোড় নির্দেশ করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর গাজা এখন কার্যত এক ধ্বংসস্তূপ; সেই বাস্তবতার মধ্যেই সোমবার তিনি ঘোষণা করলেন গাজার বিরুদ্ধে নতুন ও আরও বিস্তৃত সামরিক অভিযান শুরু হবে, যার লক্ষ্য ‘হামাস নির্মূল’ নয়, বরং গাজার জনগণকে দক্ষিণে স্থানান্তর করে ভূখণ্ডটির পূর্ণ সামরিক দখল।
এই ঘোষণার পরই ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে যে পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, তা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরছি। নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, সেনারা গাজায় ঢুকে আবার ফিরে আসবে না। অর্থাৎ, এটা আর কোনও স্বল্পমেয়াদি অভিযানের প্রশ্ন নয়—এটি দীর্ঘস্থায়ী সামরিক উপস্থিতির সূচনা। রয়টার্স ও এএফপি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার ‘পূর্ণ দখল’ এবং ‘অবস্থান ধরে রাখা’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নেতানিয়াহুর ভাষায়, গাজার জনগণকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে “তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।” অথচ বাস্তবে এ ধরনের ‘সুরক্ষা’ কৌশল জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের দৃষ্টিতে গণচ্যুতি বা forced displacement হিসেবে বিবেচিত হয়, যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এই ধারা যদি পরিকল্পিত হয়, তবে তা স্পষ্টতই জাতিগত নির্মূল নীতির প্রতিফলন।নতুন পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য যে, গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষের খাদ্য, পানি, ওষুধ, জ্বালানি—সবকিছু এখন থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে যাবে। অর্থাৎ, মানবিক সাহায্য আর স্বচ্ছ কোন আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে নেই, বরং তা হয়ে উঠছে একটি সামরিক অস্ত্র। এতে ত্রাণকে একটি নিয়ন্ত্রিত চাপের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হবে—যা সরাসরি চরম মানবিক লঙ্ঘন।
অজ্ঞাতনামা ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এখনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত "ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি" বাস্তবায়নে আগ্রহী, যার মূল নির্যাস ছিল প্যালেস্টাইনীদের নিজের ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা। এই ঘৃণিত পরিকল্পনাই আবার বাস্তবের রূপ নিচ্ছে আজকের ইসরায়েলি পদক্ষেপে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের আচরণ এই ভয়াবহ পরিণতির অন্যতম দায়ভার বহন করে। জাতিসংঘ বহুবার অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানালেও তা কার্যকর হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানির মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্র একদিকে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করছে, আবার অন্যদিকে ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে চলেছে। এ যেন এক রাজনৈতিক দ্বিচারিতা—যেখানে গণহত্যার নেপথ্যে থেকেও ‘শান্তি’ চেয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়।
আরব বিশ্বও কার্যত স্তব্ধ। মিশর, সৌদি আরব, আমিরাত—তাদের ভাষাগত প্রতিবাদের বাইরে আর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তুরস্ক ও ইরান কিছুটা উচ্চস্বরে বললেও, ইসরায়েলের ওপর সেই চাপ কার্যত শূন্য। প্যালেস্টাইন এখন কূটনৈতিক নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকা এক জাতি—যাদের পক্ষে কেউ যুদ্ধ করছে না, কেউ শান্তিও দিতে পারছে না।
গাজা আজ কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল নয়—এটি একটি প্রতীক। রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণচ্যুতি এবং নীরব বিশ্ববিবেকের প্রতীক। নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর, যদি সত্যিই গাজার পূর্ণ দখল হয়, তাহলে তা শুধু এই ভূখণ্ডের নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়ের ধারণাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—মানবতা রক্ষার জন্য তারা শুধুই বিবৃতি দেবে, না কি কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেবে? কারণ, ইতিহাস মনে রাখে কে কবে চুপ থেকেছে।
ফজর | ৩.৫৫ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১১.৫৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ৪.৩৩ টা বিকাল |
মাগরিব | ৬.৩২ টা সন্ধ্যা |
এশা | ৭.৫৫ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৪০ মিনিট দুপুর |