| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

ঝাড়খণ্ডে ভুল রক্ত সরবরাহে ৫ শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ

  • আপডেট টাইম: 08-11-2025 ইং
  • 55518 বার পঠিত
ঝাড়খণ্ডে ভুল রক্ত সরবরাহে ৫ শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ
ছবির ক্যাপশন: ঝাড়খণ্ডে ভুল রক্ত সরবরাহে ৫ শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ

রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: ভারতের পশ্চিম সিংভূম জেলাতে সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে ভুল রক্ত সরবরাহের কারণে পাঁচ শিশুর এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। সব শিশুর বয়স ৮ বছরের নিচে, এবং তারা সবাই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের জন্য তাদের হাসপাতাল ভ্রমণ করতে হয়। এ ঘটনায় গভীর দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ভুগছেন ভুক্তভোগী শিশু ও তাদের পরিবার।

শনিবার (০৮ নভেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিম সিংভূম জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিয়েছিলেন তারা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর চাইবাসার সিভিল সার্জন, এইচআইভি ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন প্রতি পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।

পশ্চিম সিংভূমের মঞ্ঝরি ব্লকের সাত বছর বয়সী শশাঙ্ক (ছদ্মনাম) সংক্রমিত রক্ত পাওয়ার পর এইচআইভি আক্রান্ত হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই বাড়িওয়ালা পরিবারটিকে বাসা খালি করার নির্দেশ দেন। শশাঙ্কের বাবা দশরথ (ছদ্মনাম) বলেন, আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বাড়িওয়ালা রাজি হননি। শেষে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি।

বর্তমানে এ পরিবারটিকে মাসে দুইবার চিকিৎসার জন্য ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। দশরথের অভিযোগ, সরকারি ভুলের কারণে এখন আমার ছেলেকে থ্যালাসেমিয়া আর এইচআইভি—দুই রোগের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে।

হাটগামহারিয়া ব্লকের সাত বছরের দিব্যা (ছদ্মনাম) একইভাবে সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে। তার মা সুনীতা (ছদ্মনাম) বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালের নার্সরা দিব্যাকে ছোঁয়া এড়িয়ে চলছিলেন। ডাক্তাররা গ্লাভস পরে দূর থেকে পরীক্ষা করছিলেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়। অক্টোবরে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ভুলবশত সংক্রমিত রক্ত দেওয়া হয়েছিল।

সুনীতা বলেন, শুরুতে আমি বুঝিনি, পরে বুঝেছি এই রোগ কত ভয়ঙ্কর। এখন আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আতঙ্কে আছি।

ঝিকপানি ব্লকের শ্রেয়া (ছদ্মনাম) নামের এক শিশু ও তার মা শ্রদ্ধা একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্রদ্ধার একমাত্র ভরসা ছিল মেয়েটি। এখন তাকে প্রতি মাসে ২৫ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় রক্ত নেওয়ার জন্য।

শ্রদ্ধা বলেন, হাসপাতালের ভুলে আমার মেয়ে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। এর জন্য আমি দুই লাখ টাকার চেক পেয়েছি, কিন্তু একটা শিশুর জীবনের মূল্য কি এতটুকু?

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ওই জেলায় ২৫৯ জন রক্তদাতা রক্ত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন এইচআইভি পজিটিভ ছিলেন।

তদন্তে জানা গেছে, রক্ত পরীক্ষায় পুরনো ‘প্রি-কিট’ ব্যবহারের কারণে সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ সচিব ডা. নেহা অরোরা জানিয়েছেন, এখন থেকে এই ধরনের কিট ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রাজ্যের ৯টি ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও সেগুলোতে কার্যক্রম চালু ছিল। এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে।

মানবাধিকারকর্মী অতুল গেরা বলেন, লাইসেন্স নবায়ন ও মাননিয়ন্ত্রণের অভাবই এই বিপর্যয়ের কারণ। ঝাড়খণ্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে, কিন্তু চিকিৎসার জন্য পুরো রাজ্যে মাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, আবাসন, রেশন, শৌচালয়সহ সব সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে। তবে শশাঙ্কের বাবা দশরথের ক্ষোভ, মন্ত্রীদের ছেলেদের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, আর আমাদের বাচ্চাদের জন্য দুই লাখ! একটা শিশুর জীবনের মূল্য কি এতটুকু। খবর-বিবিসি 


রিপোর্টার্স২৪/ঝুম

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪