স্টাফ রিপোর্টার: টেলিযোগাযোগ খাতের দীর্ঘদিনের অকার্যকর ও জটিল লাইসেন্স কাঠামো পরিবর্তনে সরকার নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং ২০২৫’ শীর্ষক নতুন পলিসি ইতোমধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এতে পুরনো লাইসেন্স কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে আধুনিক, প্রতিযোগিতামূলক ও সেবামুখী টেলিকম খাত গঠনের লক্ষ্য রাখা হয়েছে।’
শনিবার (২২ নভেম্বর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়— পুরানো লাইসেন্স রেজিমে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, পূর্বের ব্যবস্থা ইন্টারনেট বা ডিভাইস অ্যাকসেস, ফাইবার নেটওয়ার্ক, কিংবা সেবা মান—কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আনতে পারেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, একসময় অনুমোদিত তিন হাজারের বেশি লাইসেন্স কার্যত টেলিকম খাতে জটলা ও অকার্যকারিতা তৈরি করেছে। দেশের ঘরে ঘরে এবং ব্যবসা–উদ্যোগে ফাইবার অপটিক পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মোবাইল টাওয়ারেও মাত্র ২২ শতাংশ ফাইবার সংযোগ পৌঁছেছে, ফলে ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ ভারতের তুলনায় পার ক্যাপিটা মাত্র এক–পঞ্চমাংশ পর্যায়ে রয়েছে।
টেলিকম এখনো ‘কানেকশন বেইজড’ প্রডাক্টে আটকে আছে—মোবাইল বান্ডেল ও আইএসপি প্যাকেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ডিজিটাল সেবা–ভিত্তিক এডটেক, ফিনটেক, এগ্রিটেক, লজিস্টিক্স টেকসহ নতুন সেবা ইকোসিস্টেম গড়ে উঠতে পারেনি।
এ ছাড়া আইএসপি, এনটিটিএন, আইআইজি বা মোবাইল অপারেটর—কোথাও সিকিউর ইন্টারনেটের মানসম্মত ধারণা তৈরি হয়নি। অধিকাংশ নেটওয়ার্কে সাইবার সুরক্ষার প্রয়োজনীয় টুলস বা হার্ডওয়্যার নেই।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে—২৬ ধরনের লাইসেন্সের জটিলতা তুলে সহজ ও কনভার্জ লাইসেন্সিং চালুর বিকল্প নেই। সাত স্তরের লাইসেন্স দিয়ে ছয় স্তর একই প্রতিষ্ঠানের হাতে যাওয়ার সুযোগ ছিল, যা টেলিকমে অস্বাস্থ্যকর একচেটিয়া অবস্থা তৈরি করেছিল। নতুন লাইসেন্স পলিসি সেই দুর্বলতা কাটাতে সক্ষম হবে।
স্তরায়ন কমানো হলে মধ্যস্বত্বভোগী কমবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে সরকারের রাজস্ব বজায় রেখেই গ্রাহকরা আরও সুলভ মূল্যে ভালো সেবা পাবেন।
পুরনো নীতিতে কয়েক কোটি টাকার সীমিত বিনিয়োগে টোল সংগ্রহ করে ৪৫–৫০ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, যা দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। নতুন নীতিতে এসব রেন্ট-সিকিং লাইসেন্স বাদ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়— ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) ও আইসিএক্সসহ কিছু লাইসেন্সের মেয়াদ প্রায় শেষ। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিও ‘এন্ড অফ লাইফ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই পুরনো প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার বদলে নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগই হবে লাভজনক।
নতুন লাইসেন্স কাঠামোতে দেশীয় মালিকানা রক্ষায় এনটিটিএনদের ৩৫ শতাংশ, আইসিএসপি’দের ৫১ শতাংশ এবং এমএনওদের ১৫ শতাংশ শেয়ার দেশীয় অংশীদারের অনুকূলে ছাড়তে হবে। পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোক্তারা চাইলে ১০০ শতাংশ মালিকানায়ও ব্যবসা করতে পারবেন।
এছাড়া প্রায় দুই দশক পর প্রাইভেট ৫জি ও এমভিএনও খাত উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের নতুন দরজা খুলবে।
নতুন লাইসেন্স পলিসিতে কোনো প্রযুক্তিগত বাধা (টেক ব্লক) রাখা হয়নি। এতে ভুল বিনিয়োগ ঠেকিয়ে নতুন প্রজন্মের টেলিকম প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবায় বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য— দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করতে কনভার্জড লাইসেন্স সিস্টেম অপরিহার্য। সেবার গুণগত মানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেটের গতি ও মানের উন্নতি হয়েছে বলেও জানানো হয়।
নতুন পলিসিতে পুরোনো বিনিয়োগকারীদের উদ্যোক্তা–সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তারা চাইলে নতুন লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
রিপোর্টার্স২৪/ধ্রুব