রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক :
রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার। বিশেষ করে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মধ্যে এআই ব্যবহার করে তৈরি ছবি, ভিডিও ও কনটেন্ট শেয়ার করার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে অনেক কনটেন্ট রাজনৈতিক প্রচারণা ছাড়াও একে অপরের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য ছড়ানো ডিজিটাল অপতথ্যের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে। এতে একদিকে যেমন রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষও বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। তবে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের কর্মীদের প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর অনলাইনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। একইভাবে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের নিয়েও শুরু হয় নেতিবাচক প্রচার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব কনটেন্টের বড় অংশই তৈরি হচ্ছে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই দিয়ে তৈরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দল ও রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের অ্যাকটিভিস্টরা এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “সত্যের ভিত্তিতে কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করে আমরা মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, “প্রযুক্তি ব্যবহারে সমস্যা নেই, কিন্তু যখন তা হিংসা বা মিথ্যার হাতিয়ার হয়, তখন তা রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়গুলো দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।”
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “আমাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী তরুণ। তারা এআই ভিত্তিক প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করে তা ডিবাঙ্ক করার জন্য কাজ করছেন।”
এদিকে অপতথ্য ও ভুয়া কনটেন্ট নিয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থা ডিসমিস ল্যাবের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু বিরোধিতাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আদায়েও এআই ব্যবহার বাড়ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক ফাহিম মাশরুর বলেন, “এআই দিয়ে তৈরি প্রচারণা ঠেকানো সম্ভব না হলেও নেতিবাচক ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই তাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। প্রযুক্তিজ্ঞান কম থাকায় অনেক মানুষ এসব বিভ্রান্তিকর কনটেন্টে বিশ্বাস করে ফেলছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনী বছর হওয়ায় অনলাইনে এআই ভিত্তিক প্রচার আরও বাড়বে। তাই সময় থাকতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে এআই ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
.
রিপোর্টার্স২৪/এস