| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

জার্মান গবেষণা বলছে

গাজায় ইসরাইলি হামলায় দুই বছরে নিহতের সংখ্যা লাখ ছাড়াল

  • আপডেট টাইম: 25-11-2025 ইং
  • 38929 বার পঠিত
গাজায় ইসরাইলি হামলায় দুই বছরে নিহতের সংখ্যা লাখ ছাড়াল
ছবির ক্যাপশন: গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃত্যু ১ লাখ ছাড়াল, জার্মান গবেষণার চাঞ্চল্যকর দাবি

রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার দুই বছরের সামরিক হামলা বাস্তবে কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে—তা নিয়ে নতুন এক চমকপ্রদ তথ্য হাজির করেছে জার্মানির বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, সরকারি হিসাবের বাইরে আরও বিপুল সংখ্যক মানুষ এই যুদ্ধের বলি হয়েছেন। সর্বশেষ গবেষণায় প্রকাশ, গাজায় নিহতের সংখ্যা অন্তত এক লাখের বেশি, যা এতদিনের গণনা থেকে বহু গুণ বেশি।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আনাদোলু বার্তা সংস্থাকে উদ্ধৃত করে জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট জানায়, গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে বাস্তব মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে যে ধারণা এতদিন প্রচলিত ছিল, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি তার তুলনায় ভয়াবহভাবে বেশি হতে পারে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের একদল বিশেষজ্ঞ দীর্ঘ গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানিয়েছেন। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ধ্বংসাত্মক আগ্রাসনে ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। গড় হিসেবে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯ জন।

গবেষণা প্রকল্পের সহ-নেতা ইরিনা চেন বলেন, সঠিক মৃত্যুর সংখ্যা আমরা কখনোই জানতে পারব না। আমরা শুধু যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত একটি অনুমান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। গবেষকরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ছাড়াও স্বাধীন পরিবারভিত্তিক জরিপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদ এবং বিভিন্ন উৎসের তথ্য একত্র করে পরিসংখ্যানগত মডেল তৈরি করেছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত দুই বছরে ৬৭ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল। তবে জাইট–এর প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়। তাদের তথ্যের মধ্যে কারসাজির কোনো প্রমাণ নেই; বরং বিভিন্ন গবেষণা দল আগেই দেখিয়েছে যে মন্ত্রণালয়ের হিসাব সাধারণত তুলনামূলক রক্ষণশীল। অর্থাৎ প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি, যা বিভিন্ন স্বাধীন গবেষণাতেও প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হয়েছে।

যুদ্ধের কারণে গাজার অনেক হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বহু মৃত্যুর তথ্য অফিসিয়াল রেকর্ডে উঠে আসে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া অসংখ্য মানুষের কোনো সনদ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন হাসপাতালের বাইরে থেকে পাওয়া মৃত্যুসংবাদ সংগ্রহ করে বিশেষ প্যানেলের মাধ্যমে যাচাই করছে।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকরা শুধু মোট মৃত্যুর সংখ্যা নয়। কোন বয়স ও লিঙ্গের মানুষের মৃত্যু কত বেশি হয়েছে তাও আলাদা করে বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে ২৭ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু, আর ২৪ শতাংশ নারী।

এছাড়াও যুদ্ধ গাজার মানুষের জীবনযাত্রা ও আয়ুষ্কালের ওপর কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তা নিয়েও গবেষণায় বিস্তারিত উঠে এসেছে। যুদ্ধের আগে গাজায় নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৭ বছর, পুরুষদের ৭৪ বছর। কিন্তু ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী এই সংখ্যা নেমে এসেছে যথাক্রমে ৪৬ বছর ও ৩৬ বছরে। অর্থাৎ যুদ্ধের ধারা অব্যাহত থাকলে সাধারণ ফিলিস্তিনি নারী–পুরুষের প্রকৃত জীবন প্রত্যাশা ভয়াবহভাবে কমে যাবে।

গবেষণার সামগ্রিক হিসাব স্পষ্ট করে দিচ্ছে। গাজার সাধারণ মানুষ এখন মৃত্যুঝুঁকির এমন এক বিপর্যয়কর বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে, যার তুলনা আধুনিক ইতিহাসে বিরল।


রিপোর্টার্স২৪/ঝুম

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪