| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভাগ্য আন্তর্জাতিক জালে: তিনি আদৌও ফিরতে পারবেন দেশে?

তারেক রহমানের অনুপস্থিতি কি 'মাইনাস ফোর' ফর্মুলার ইঙ্গিত?

  • আপডেট টাইম: 01-12-2025 ইং
  • 6612 বার পঠিত
তারেক রহমানের অনুপস্থিতি কি 'মাইনাস ফোর' ফর্মুলার ইঙ্গিত?
ছবির ক্যাপশন: শাহানুজ্জামান টিটু

শাহানুজ্জামান টিটু

রাজনীতির অদৃশ্য ফ্লাডলাইটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে না ফেরার পেছনে যেসব প্রশ্ন ঘুরছেে এরমধ্যে পাসপোর্ট, সরকারি প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক নিরাপত্তা, সম্ভাব্য বিদেশি চাপ এবং নেতৃত্ববদলের তত্ত্ব সোজা কথায় মাইনাস টু তত্ত্ব বিবর্তনে মাইনাস ফোর ফমূর্লা এখন আর আলাদা কোনো বিষয় নয়। এগুলো একসঙ্গে একটি বড় বাস্তবতা ইঙ্গিত করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব, নিরাপত্তা, কূটনীতি ও প্রশাসন একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এখানে একটি সিদ্ধান্ত একক কারণে নেওয়া যায় না বরং বহুস্তরীয় জটিলতার ফলাফলই নীতি নির্ধারণ করে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রশ্ন হলো তার পাসপোর্ট আছে কি না। সূত্র জানায়, তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট “নিষ্ক্রিয়” বা “সাপেন্ডেড” অবস্থায় আছে। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন কি-না, এই বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়ায় তার নাগরিকত্ব ও দেশে ফেরার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যদি তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নবায়ন না করে থাকেন এবং ব্রিটিশ বা অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, তবে এটি তার দেশে ফেরার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলবে এবং তাকে নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি মূলত দুটি প্রধান স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল এক. দেশের ভেতরের আইনি ও রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব সম্মতি বা নীতির পরিবর্তন। যতক্ষণ না এই সমীকরণগুলোর সমাধান হচ্ছে, ততক্ষণ তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন না হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা কঠিন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুটি বৃহৎ শক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়টি তাঁর দেশে ফেরার পথে একটি বড় আন্তর্জাতিক বাধা হিসেবে কাজ করছে।

তার দেশে ফেরা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বাধা না থাকলেও অনানুষ্ঠানিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ বাস্তবে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এখানে প্রশাসন ও রাজনীতির ব্যবধানটি স্পষ্ট। আইন অনুযায়ী ট্রাভেল পাস ইস্যু করা কঠিন নয়। কিন্তু রাজনীতিবিদের প্রত্যাবর্তন সবসময় কাগজের নিয়মে চলে না। চলে রাজনৈতিক সংকেত, নিরাপত্তা অনুমান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অদৃশ্য অঙ্কে। একটি শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার ভাগ্য দেশের অভ্যন্তরীণ মেরুকরণ ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির জটিল জালে আটকে আছে। 

বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে তার দীর্ঘ অবস্থান, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়া, এবং পশ্চিমা কূটনৈতিক মহলে তারেক রহমান  সম্পর্কে পূর্ববর্তী মন্তব্য এসব বিষয় তার চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তার বক্তব্যটি আসলে সেই বড় বাস্তবতা উন্মোচন করে যেখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা শুধু একটি ভগ্নাংশ; বাকি অংশটা নির্ধারণ করে রাজনীতি, কূটনীতি এবং নিরাপত্তা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিধানে ‘মাইনাস টু’ শব্দটি এসেছে ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে, যখন প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছায়াময় উদ্যোগের কথা শোনা যায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজনৈতিক মহলে নতুন একটি শব্দ চর্চা পাচ্ছে ‘মাইনাস ফোর’। এখানে কারা ‘ফোর’? সাধারণ আলোচনায় বলা হচ্ছে দুই প্রধান দলের দুই শীর্ষ নেতা এবং প্রত্যেক দলের সম্ভাব্য দুই উত্তরসূরি বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব আনতে আন্তর্জাতিক কিছু মহল চাপ দিচ্ছে; আবার কেউ বলছেন এটি কেবল রাজনৈতিক ভাষ্য, কোনও বাস্তব কৌশল নয়। আর এসব আলোচনার মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলেছেন শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সম্প্রতি বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে তিনি  বলেছেন,

‘বিদেশি মহল বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব মাইনাস করতে মরিয়া।’ 

তারেক রহমানের অনুপস্থিতি, সরকারি–বেসরকারি প্রতিক্রিয়া, কূটনৈতিক জটিলতা, এবং ‘মাইনাস ফোর’ বিতর্ক এসব মিলে রাজনীতিতে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা হলো একটি দেশ যেখানে নেতৃত্ব বদলের চাপ, নিরাপত্তা ঝুঁকি, এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করছে। 

তারেক রহমানের দেশে ফিরতে না পারা হয়তো একটি ঘটনা। কিন্তু এর নেপথ্যে যে প্রশ্নগুলো উঠছে সেগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির বহুস্তরীয় সংকট, পরিবর্তন এবং অস্থিরতার ইঙ্গিতই দেয়। বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির দিশা নির্ভর করবে, এই নেতৃত্ব সংকট, কূটনৈতিক প্রভাব, এবং আস্থা পুনর্গঠনের যুদ্ধে কোন পক্ষ কতটা দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে তার ওপর।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪